কান্টি ডেস্ক, ঢাকা: ঝিনাইদহসহ চার জেলার দায়িত্বে থাকা মৎস্য বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারি কাজ দেয়ার নাম করে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া পুকুর, বিল ও বাঁওড় খনন বাবদ অনেক এস্কেভেটর (ভেকু) মালিক তার কাছে লাখ লাখ টাকা পাবেন। ঝিনাইদহ জেলা মৎস্য বিভাগ তার সীমাহীন দুর্নীতির কারণে গত দুই বছর কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেনি। এদিকে টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে আদালতে তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের একাধিক মামলা করেছেন ঠিকাদাররা।
ঝিনাইদহ জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদের দায়িত্ব ছিল ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় স্কিম করা ও গৃহীত প্রকল্পসমূহ তদারকি করা। তিনি পিডি আলিমুজ্জামানের সঙ্গে লাভের টাকা ভাগাভাগি করে এককভাবে ৪ জেলার সমস্ত কাজ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। উপরন্তু তিনি তার সরকারি দায়িত্বের বাইরে গিয়ে বেপরোয়া ভাবে ঠিকাদারি কাজে জড়িয়ে পড়েন। পুকুর খননের প্রকল্পগুলো ঠিকাদারের লাইসেন্স নিয়ে তিনি একাই করে গেছেন। আবার অনেক প্রকল্প কাজ না করেই তিনি বিল তুলে নিয়েছেন।
মৎস্য সেক্টরে তার এই একচ্ছত্র দৌরাত্ম্যে দেখে চার জেলার ঠিকাদাররা কোটি কোটি টাকা দিয়েছেন কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য। শেষ মুহূর্তে তিনি এই টাকা পকেটস্থ করে নাটোর জেলায় বদলি হয়েছেন। ঝিনাইদহ ছাড়াও তিনি কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এমনই একজন নলডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কবির হোসেন। সদর উপজেলার কাজলী বিল খননের প্রকল্প করে দেয়ার নাম করে নলডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কবির হোসেনের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদে। সেই টাকা এখনো দেননি বলে কবির হোসেন এ প্রতিনিধির কাছে স্বীকার করেন। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঝিনাইদহ জেলা মৎস্য দপ্তরের সমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রকল্প পরিচালক ও মহাপরিচালকের কাছে লিখিত চিঠি দেয়া হয়।
ঠিকাদার ও এস্কেভেটর (ভেকু) মালিকদের অভিযোগে ৯ই মার্চ সোহেল আহম্মেদকে এই জেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিলেও তাৎক্ষণিক ভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। হরিণাকুণ্ডুর ইমারত হোসেন নামে এক ঠিকাদার জানান, তিনি উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদের কাছে ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার জন্য ৬ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। তিনি এক লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। বাকি টাকার জন্য মাসের পর মাস ঘুরছেন।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পোলতাডাঙ্গা গ্রামের ঠিকাদার আব্দুল গনি জানান, তিনি ৯ লাখ টাকা দিয়েছিলেন ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার জন্য। কিন্তু কাজও পাননি আবার টাকাও দেননি। ফলে টাকা উদ্ধার করতে না পেরে আদালতে দুইটি চেকের মামলা করেছেন। ঝিনাইদহ শহরের লিমা এন্টারপ্রাইজের মালিক আশরাফুল আলম মফিজ জানান, তিনিও ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার আশায় ১৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদ তাকে রুপালী ব্যাংকের দুইটি চেক দিয়েছিলেন, কিন্তু টাকা তুলতে পারেননি আজও। তিনিও চেক ডিজঅনারের মামলা করবেন।
ঝিনাইদহের সাবেক জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও বর্তমান যশোরের বিল বাঁওড় প্রকল্পের পরিচালক আলফাজ উদ্দীন শেখ জানান, সোহেলের বিষয়ে একাধিক চিঠি সে সময় মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হলেও ত্বরিত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে কিছুদিন আগে তাকে নাটোর জেলায় বদলি করা হয়েছে বলে শুনেছি।
ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদ বলেন, ইতিমধ্যে অনেকের টাকা ফেরত দিয়েছি। যারা চেক ডিজঅনারের মামলা করেছেন তাদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। আমি সময় নিয়েছি। তিনি বলেন, কুষ্টিয়ায় থাকতে আমার বিরুদ্ধে বহু লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু আমার কিছুই হয়নি, আমার ডিপার্টমেন্ট, আমার পক্ষে আছে।এদিকে পিডি আলিমুজ্জামান সম্ভবত গত ২৫শে আগস্ট ২০২২ইং অবসরে গিয়েছেন।